জন্ম নিবন্ধন ভুল সংশোধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন সনদ যাদের হাতে রয়েছে অথবা নতুন করে যারা জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য নিবন্ধন করছেন তাদের হয়তো অল্প কিছু দিনের ভেতরে এটার অরিজিনাল ডকুমেন্টস হাতে এসে পৌঁছাবে। তবে আপনার হাতে থাকা জন্ম নিবন্ধন সনদে যদি কোন ধরনের ভুল পরিলক্ষিত হয় এবং এই ভুলের যদি সংশোধন করতে চান তাহলে অবশ্যই আবেদন করতে হবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সেবা স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে প্রদান করে আসছে এবং সর্বপ্রথম আমাদেরকে অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের আবেদন করতে হবে। তাই আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের যদি পিতা-মাতার নাম থেকে শুরু করে নিজেদের নাম ভুল হয়ে থাকে তাহলে আর দেরি না করে সংশোধনের আবেদন করবেন। সংশোধন অনুযায়ী আপনাদেরকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আবেদন ফি প্রদান করতে হবে। তবে সংশোধনের সঙ্গে আপনাদেরকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে এবং আপনি যদি প্রমাণপত্র দাখিল করতে না পারেন তাহলে তথ্য সংশোধন হবে না।
জন্ম নিবন্ধনে ভুল কেন হয়
জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী আমরা এই দেশের যে একজন নাগরিক এবং নির্দিষ্ট এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছে সে সকল তথ্য একটি নির্দিষ্ট কার্ডে উপস্থিত থাকে। জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে কোন শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন ভর্তি হতে পারবে তেমনি জরুরী ভিত্তিতে পিতামাতার সাথে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ভিসা সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তাই জন্ম নিবন্ধন যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এটা সংশোধন করে নিবেন এবং সেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ যদি সংশোধন না করেন তাহলে তার সকল ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট একই ধরনের তথ্য দিয়ে বের হয়ে আসবে।
তাই পরবর্তীতে সকল ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট সংশোধন না করে আপনারা জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করে নিতে পারেন। কারণ এটা কম সময়ে এবং কম খরচে সংশোধন করা যায় বলে জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করাটাই সবচেয়ে উত্তম হবে। তবে প্রত্যেকটি তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জসতা থাকতে হবে এবং আপনারা যদি মন গড়া তথ্য প্রদান করেন তাহলে সংশোধন হবে না। জন্ম নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধন করার জন্য হাতে লিখে আবেদন ফরম পূরণ করার পরিবর্তে এখন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন ফরম পূরণ করবেন এবং আবেদন ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে সেটা নিয়ে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে গিয়ে জমা দিবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন লাগে
আবেদন সাবমিট করার ১৫ দিনের ভেতরে আপনারা যদি এই আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফিসহ প্রদান না করেন তাহলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তাই হাতে যদি জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে থাকে এবং সেখানে যদি ভুল দেখতে পান তাহলে দেরি না করে অথবা দীর্ঘসূত্রতার তার পথ বেছে না নিয়ে তৎক্ষণাৎ আবেদন করুন। জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করার লিংক প্রদান করা সহ প্রত্যেকটি ধাপে আপনারা কোন কোন তথ্য প্রদান করে আবেদন করবেন সেগুলো আপনাদের সামনে আজকে উপস্থাপন করব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যগুলো ওয়েবসাইটে ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে অথবা তথ্য নিবন্ধনের সময় খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করে এগুলো করেননি বলে এখন অনেকের তথ্য সংশোধন করার আবেদন করতে হচ্ছে।
তাই তথ্য সংশোধন আবেদন করার জন্য আপনারা গুগল ক্রোম ব্রাউজারে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট কারেকশন লিখে সার্চ করতে পারেন। আর যদি মনে করেন লিঙ্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে এই কাজটি করবেন তাহলে অবশ্যই
https://bdris.gov.bd/br/correction এই লিংক ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনারা প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পাদন করবেন। অর্থাৎ এই লিংক ব্যবহার করার মাধ্যমে সরাসরি কারেকশন করার পেইজের নির্দিষ্ট স্থানে যেতে পারবেন এবং সেখান থেকে আপনাদের তথ্য কালেকশন করার সুযোগ পাবেন। যদি পিতা মাতার তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হয় তাহলে তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া জন্ম সাল যদি ২০০০ সালের পূর্বে হয় তাহলে একরকম ভাবে সংশোধন করতে হবে এবং ২০০০ সালের পরে হলে সেটা অন্যভাবে করতে হবে।
জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন
তাই সংশোধন বিষয়ক যে সকল দিক নির্দেশনা আপনাদেরকে প্রদান করা হচ্ছে সেগুলো আপনারা ভালোমতো বুঝবেন এবং নিচের দিকে গিয়ে আপনার বার্থ সার্টিফিকেটের নাম্বার প্রদান করবেন। জন্ম নিবন্ধন সনদের ১৭ ডিজিটের নাম্বার এবং জন্মতারিখ প্রদান করতে হবে। তারপরে সার্চ অপশন চলে আসলেই আপনারা সেখানে আপনাদের নাম দেখতে পারবেন এবং সেই নাম আপনার হয়ে থাকলে “নিশ্চিত করুন” অপশনে ক্লিক করতে হবে। আর যদি সেই নাম আপনার না হয়ে থাকে তাহলে সর্ব প্রথমে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে যেতে হবে এবং তারা আপনাদের তথ্যগুলো অনলাইন করে দেওয়ার পর তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
তবে আপনার নাম খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী পেজে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে আপনাদের ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে। প্রথমে আপনাদের দেশ নির্বাচন করবেন এবং এভাবে বিভাগ থেকে শুরু করে আপনাদের বাসার হোল্ডিং নাম্বার পর্যন্ত প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে হোল্ডিং নাম্বার যদি না থাকে তাহলে বাড়িতে একটা আনুমানিক নাম প্রদান করবেন এবং তথ্যগুলো প্রদান করা বাধ্যতামূলক করার কারণে কোনো তথ্য স্কিপ করার সুযোগ নেই। এখন আপনাদেরকে পরবর্তী পেজে যেতে হবে এবং সেখানে গিয়ে তথ্য সংশোধনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে। সেখানে আপনাদের তথ্য সংশোধন করার জন্য যে সকল তথ্য সংশোধন করার অপশন রয়েছে সেখান থেকে সেই অপশন নির্বাচন করতে হবে।
আপনার প্রয়োজনীয় অপশন নির্বাচন করার পরে ভুল তথ্য প্রদান করবেন এবং ভুল তথ্যের পরিবর্তে কোনটি সঠিক তথ্য হবে তা লিখে দিবেন। অর্থাৎ বর্তমানের তথ্য এবং সংশোধিত তথ্য হিসেবে কি হবে উভয় প্রদান করতে হবে। এরপরে আপনাদেরকে জন্ম নিবন্ধন সনদের এই তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করার সময় ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল তা উল্লেখ করতে হবে। এভাবে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের কাজগুলো সম্পন্ন করবেন এবং এক বা একাধিক তথ্য যদি সংশোধন করার প্রয়োজন হয় তাহলে নিচের দিকে আরও তথ্য সংযোজন করুন অপশনটিতে নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একবার একাধিক তথ্য সংশোধন করার জন্য অপশনের মাধ্যমে ভুল তথ্য এবং সঠিক তথ্য লিখে দিয়ে আবেদন করবেন।
ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের উপায়
এরপরে আপনাদেরকে স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করতে হবে। আগের পেজে বর্তমান ঠিকানা প্রদান করে থাকলেও স্থায়ী ঠিকানা এখানে আপনাদেরকে দিয়ে দিতে হবে এবং এক্ষেত্র দেশ নির্বাচন থেকে শুরু করে বাসার হোল্ডিং নাম্বার পর্যন্ত তথ্য প্রদান করতে হবে। মোটামুটি ভাবে তথ্য সংশোধনের এই কাজগুলো করা হয়ে গেলে আপনারা আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করবেন। আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ এর অধিক হয়ে থাকে এবং আবেদনকারী যদি নিজে হয়ে থাকে তাহলে নিজ অপশন নির্বাচন করবেন। আর যদি আবেদনকারীর বয়স ১৮ এর নিচে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা অন্যান্য অপশনটি নির্বাচন করবেন অথবা পরিবারের অন্যান্য কোন সদস্য হলে সেটা নির্বাচন করতে পারবেন। এরপরে আপনাদের নিচের দিকে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে।
অর্থাৎ আপনার তথ্য সংশোধন করার জন্য যে তথ্যগুলো প্রদান করলেন তার প্রেক্ষিতে কোন কাগজপত্র বা প্রমাণপত্র সাবমিট করতে যাচ্ছেন তা নির্বাচন করবেন এবং আপলোড অপশনে গিয়ে আপলোড করবেন। এভাবে আপনার কাগজপত্র নির্দিষ্ট রেজুলেশনের ভেতরে আপলোড করে নিচের দিকে ফি আদায় অপশনটি নির্বাচন করবেন। কারণ চালান ফর্মের মাধ্যমে এই পেমেন্ট করতে গেলে আপনাদেরকে আরো একটু বেশি খাটনি করতে হবে। তাই আবেদন পত্র যখন জমা দেবেন তখন স্থানীয় সরকার বিভাগ আপনাদের থেকে এই ফি গ্রহণ করবে এবং আপনার ঝামেলা অনেকটাই কমবে। আবেদনপত্র সাবমিট হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার যে অ্যাপ্লিকেশন আইডি প্রদান করা হচ্ছে সেটা সংগ্রহ করে রাখবেন এবং পরবর্তীতে আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখে নিয়ে এটা সংগ্রহ করে নিবেন।