জন্ম নিবন্ধন নতুন আবেদন করার সহজ নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন নতুন আবেদন করার সহজ নিয়ম

কারো পরিবারে যদি শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা দেরি না করে পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের উপর ভিত্তি করে নতুন আবেদন করবেন। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ এতটাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে আপনারা এটা ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারবেন না। সাধারণত শিশুর বয়স যখন 5 থেকে 6 বছর পূর্ণ হবে তখন তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে গেলেও তার পরিচয় পত্র হিসেবে জন্ম নিবন্ধন সনদ চাওয়া হবে।

তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের গুরুত্ব সকলকে বুঝতে হবে এবং তথ্য নিবন্ধনের সময় কোন তথ্য যেন ভুল না হয় সে বিষয়েও সতর্ক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের নতুন নিবন্ধন বা নতুন আবেদন সংক্রান্ত তথ্য গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। ঘরে বসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে চাইলে আবেদন করতে পারেন অথবা অনলাইন সার্ভিসের দোকানে গিয়ে আপনারা এই আবেদন করলে অনেক ভালো হবে। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে এই পোস্ট পড়বেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন

জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন রয়েছে। ওয়েবসাইটে আপনারা যখন জন্ম তারিখের তথ্য প্রদান করতে যাবেন তখন আপনাদের এ সকল কাগজপত্র দেখানো হবে। জন্ম তারিখ অনুযায়ী আপনারা শিশুর টিকা কার্ড অথবা হাসপাতাল থেকে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে গ্রহণ করা প্রত্যয়ন পত্র লাগবে। সেই সাথে সেই শিশু যে জায়গায় বসবাস করছে সেই জায়গার খাজনা পরিশোধের রশিদ অথবা তার পৈত্রিক ভিটার জমি খারিজের রশিদ প্রদান করতে হবে। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য যখন নিবন্ধন করবেন তখন এই সকল কাগজপত্র নিজেদের সংগ্রহ রেখেই নিবন্ধন করবেন।

আমরা আপনাদের মাঝে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য কিভাবে নিবন্ধন করতে হয় অথবা নতুন আবেদন কিভাবে করবেন তা জানিয়ে দেব। যদি আপনারা আবেদন ফরম অনলাইন এর মাধ্যমে ডাউনলোড করে হাতে পূরণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রদান করতে চান তাহলে বলব যে হাতে লিখে ফরম পূরণ করলে বিডিআরআইএস এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে আপনার তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করা হবে না। কারণ সেখানে তথ্য লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমেই আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রিন্ট আউট করার নির্দেশনা প্রদান করা হবে। আর তখন স্থানীয় সরকার বিভাগ আপনারই জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যগুলো প্রিন্ট আউট করবে এবং প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর প্রদান করার ভিত্তিতে আপনাদের তা হস্তান্তর করবে। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের এ সকল কাদের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই বর্তমানের নিয়ম এবং আপডেট নিয়ম মেনে চলতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ধাপসমূহ

আপনার যখন জন্ম নিবন্ধন এর নতুন আবেদন করার প্রয়োজন হবে তখন বিডিআরআইএস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে অথবা বার্থ সার্টিফিকেট অ্যাপ্লিকেশন লিখে সার্চ করতে হবে। তবে আপনাদের সুবিধার্থে https://bdris.gov.bd/br/application এই লিংক এখান থেকে কপি করে নেওয়ার জন্য বলা হলো। আপনারা এই লিংক এখান থেকে কপি করে নিবেন এবং সরাসরি অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের আবেদন করার পেইজে যেতে পারলে সেখান থেকে আবেদনের যাবতীয় ধাপ মেনে চলতে পারবেন। যেহেতু জন্ম নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে একটা শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হয় সেহেতু অবশ্যই এমন ভাবে তথ্য প্রদান করবেন যা দ্বারা তার সার্টিফিকেট তৈরিতে কোন ধরনের বাধা প্রাপ্ত না হয়।

আবার কোন শিশু যদি জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করার ভিত্তিতে দেশের বাইরে যেতে চাই এবং পাসপোর্ট ভিসা সংক্রান্ত কাজ করতে চাই তাহলে সেখানেও আপনার তথ্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। কারণ আমাদের জাতীয় জীবনে জন্ম নিবন্ধন সনদ, এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র হিসেবে কাজ করে থাকে। তবে যাই হোক উপরের লিংক ব্যবহার করার মাধ্যমে যখন আপনারা নতুন আবেদন করার পেজে যেতে পারবেন তখন কোন ঠিকানার ভিত্তিতে আবেদন করতে চান এটা সর্বপ্রথম আপনাদেরকে নির্বাচন করতে হবে। তবে স্থায়ী ঠিকানার ভিত্তিতে আবেদন করা সবচাইতে ভালো হবে এবং জরুরি প্রয়োজনে আপনারা বর্তমান ঠিকানার ভিত্তিতেও আবেদন করতে পারেন।
bdris.gov.bd

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনের উপায়

তবে বিশেষ প্রয়োজনে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা যদি প্রদান করতে না পারেন তাহলে জন্মস্থানের ঠিকানার ভিত্তিতে আবেদন করলে কোন সমস্যা হবে না। আর কোন শিশু যদি দেশের বাইরে জন্মগ্রহণ করে তাহলে দূতাবাসের মাধ্যমে দেশ নির্বাচন এবং অফিস নির্বাচনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। তাই যে ঠিকানার ভিত্তিতে আবেদন করতে চান সেই ঠিকানা সেখানে নির্বাচন করুন এবং পরবর্তী ধাপে চলে যান। সেখানে জন্ম নিবন্ধনকারী ব্যক্তির আসল তথ্য প্রদান করতে হবে এবং প্রথমে তার নাম প্রদান করবেন। বাংলায় নামের প্রথম অংশ এবং শেষ অংশ প্রদান করার পর ইংরেজিতে নামের প্রথম অংশ এবং শেষ অংশ প্রদান করতে হবে।

তারপরে সেই ব্যক্তির জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে এবং জন্ম তারিখের ঘরে যখন আপনারা তারিখ নির্বাচন করতে যাবেন তখনই আপনাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে আছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে থাকার ভিত্তিতে আবেদন করার সুযোগ প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী পেজে গিয়ে যখন আপনারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে পারবেন না তখন আপনার আবেদনের প্রত্যেকটি তথ্য ইনপুট করা বৃথা হবে। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার ভিত্তিতে আপনারা নিচের দিকে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে আপনার লিঙ্গ এবং জাতীয়তা উল্লেখ করবেন। পরিবারের কততম সন্তান সেটা উল্লেখ করতে হবে। এরপরে আপনারা যে ঠিকানার ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চাচ্ছেন সেই ঠিকানা আপনাদেরকে প্রদান করতে হবে।

আপনারা সেই বিভাগের নাম উল্লেখ করবেন এবং জেলার নাম উল্লেখ করে উপজেলা থেকে শুরু করে বাসার হোল্ডিং নাম্বার পর্যন্ত প্রদান করতে হবে। তাই প্রত্যেকটি তথ্য সুষ্ঠুভাবে প্রদান করার পরে আপনারা যখন পরবর্তী পেজে যাবেন তখন পরবর্তী পেজ আপনাদেরকে পিতামাতার তথ্য প্রদান করতে বলবে। বর্তমানের নিয়ম অনুযায়ী পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে এবং পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের নাম্বার সেখানে ইনপুট করতে হবে। যখন পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বার প্রদান করা হয়ে যাবে তখন সেখানে অটোমেটিক্যালি তাদের নাম ফিলাপ হয়ে যাবে। তাই পিতা মাতার নামগুলো আপনারা সুষ্ঠুভাবে সেখানে প্রদান করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করার পরে পরবর্তী পেজে গেলে আপনাদেরকে স্থায়ী ঠিকানা তথ্য প্রদান করতে বলবে।

জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা

যে ঠিকানার ভিত্তিতে আবেদন করেছেন এবং যে ফরমেটে তথ্য প্রদান করেছেন ঠিক একই ফরমেটে আপনাদেরকে স্থায়ী ঠিকানার তথ্য প্রদান করতে হবে। এরপরে আপনাদেরকে আবেদনকারীর তথ্য দিয়ে দিতে হবে। আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের অধিক হয়ে থাকে তাহলে তিনি নিজে আবেদন করছেন বলে উল্লেখ করবেন এবং ১৮ এর নিচে হয়ে থাকলে অভিভাবকের জায়গায় সম্পর্কের দিক থেকে যা হয় সেই সম্পর্ক সেখানে প্রদান করবেন। তারপরে আপনাদেরকে নিচের দিকে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে। তবে আবেদনকারীর তথ্যের জায়গায় একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিবেন এবং ইমেইল এড্রেস থাকলে সেটা প্রদান করবেন। কারণ মোবাইল নাম্বারে অ্যাপ্লিকেশন আইডির একটা এসএমএস চলে আসবে এবং সেই আইডি নাম্বার সংগ্রহ করে আপনারা পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবেন।

তাছাড়া আপনাদের জন্য উপরের দিকে যে সকল কাগজপত্রের কথা উল্লেখ করা হলো সে সকল কাগজপত্র আপনারা প্রদান করবেন এবং নির্দিষ্ট রেজুলেশনের ভেতরে আপলোড করবেন। এভাবে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রত্যেকটি কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আবেদনপত্রের পেমেন্ট হিসেবে ফি আদায় অপশন নির্বাচন করবেন। এভাবে আবেদনপত্র সাবমিট করে দিবেন এবং সাবমিট করার পর আপনাকে যে অ্যাপ্লিকেশন আইডি প্রদান করা হবে সেটা সংগ্রহ করে রেখে দিবেন। তারপরে আবেদন পত্র ডাউনলোড করবেন এবং সেটার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ আবেদন ফি জমা দিয়ে আবেদন শেষ করলেই আপনাদের কাজ মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে যাবে। তারপরে আপনারা আপনাদের এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলরের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।

bdris.gov.bd